Tuesday 7 April 2020

করোনা গরমে কম ছড়ায়? - Cox Journal24


তুষারপাতের দিন কাটিয়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এখন ঋতু পরিবর্তনের হাওয়া। ধীরে ধীরে গরম বাড়ছে; তাপদাহও বাড়ছে। উষ্ণ আবহাওয়া কি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে পারে?
তাপমাত্রা বাড়লে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমবে কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে বিশ্ব। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নভেল করোনাভাইরাসও কোনো মৌসুমি সংক্রমণের ধাঁচ অনুসরণ করে কিনা তা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তার মাত্রা খুব সামান্য হতে পারে বলে তারা সতর্ক করছেন। খবর বিডিনিউজের।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাজ্যে ঠাণ্ডার উপসর্গ দেখানো করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলো নিয়ে প্রাথমিক গবেষণায় ঋতু বদলের সঙ্গে সংক্রমণ বাড়া-কমার সম্পর্ক পাওয়া গেছে। শীতে এটা বেড়ে গেলেও বসন্তে আর থাকে না। তবে অল্প কয়েকটি করোনাভাইরাস আছে যেগুলো গরমেও সংক্রমিত হয় বলে মনে হয়। এইচসিওভি-এনএল৬৩, এইচসিওভি-ওসি৪৩, এইচসিওভি-২২৯ই নিয়ে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা গত সপ্তাহে প্রকাশ হয়েছে। কয়েক বছর আগের নমুনা বিশ্লেষণ করে ওই গবেষণা বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেশি; কিন্তু গ্রীষ্মে এই প্রকোপ কমে আসে।
তাপমাত্রা পরিবর্তনের সাথে করোনাভাইরাসের বিস্তারে বেশ-কম নিয়ে আরো কিছু গবেষণাতেও দাবি করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে গার্ডিয়ান। এরপরও কিছুটা সতর্ক থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ওই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া রব অলড্রিজ। গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকৃতি এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা বলে ঋতু বদলের কারণে এই প্রকোপ প্রভাবিত হবে কিনা তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না। এ কারণে এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই জরুরি।
বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ হুঁশিয়ার করে বলছেন, এই ভাইরাস একেবারে নতুন। মানুষের শরীরে হঠাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়া কঠিন। এ কারণেই গ্রীষ্ম এসে গেলেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো থামছে না।
ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ভাইরোলজিস্ট মাইকেল স্কিনার বলেন, ঋতু পরিবর্তন এই ভাইরাসের বিস্তারে প্রভাব ফেললেও তা খুব সামান্য হতে পারে। তা কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব রাখার বিকল্প হতে পারে না।
রিডিং ইউনিভার্সিটির বেন নিউম্যান সতর্ক করে বলেন, চীনে যখন নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয় তখন সেখানে জমাট শীত। এসময় সংক্রমণ দেখা দেয় আইসল্যান্ড ও বিষুবরেখায় থাকা ব্রাজিলের পাশাপাশি ইকুয়েডরেও। শীত থেকে বসন্ত আসতে আসতে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যায়। আর তাই প্রকৃতির ওপর নির্ভর না করে মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে ভাইরাসকে মোকাবিলার ওপর জোর দেন তিনি।
রয়টার্স বলছে, সামপ্রতিক দিনগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হঠাৎ ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় এই ভাইরাস গরমে কম ছড়ানোর তত্ত্ব নিয়ে এর মধ্যেই ব্যাপক সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
গরম এই অঞ্চলের অনেক দেশে তুলনামূলক সংক্রমণের ঘটনা বসন্তমুখী ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য আশা জাগাচ্ছিল। কিন্তু সমপ্রতি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, এমনকি বাংলাদেশেও পরীক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণের হারও বাড়ছে। তাই সে আশার গুঁড়েবালি হতে পারে।
সিঙ্গাপুরের লি কোয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির অধ্যাপক টিক্কি প্যানজেস্তু বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এখন যা ঘটছে তাতে ‘গরমে কম ছড়ানোর’ তত্ত্ব খাটছে না। ইউরোপের লোকেরা আশা করছে গরম আবহাওয়া এই ভাইরাসকে মেরে ফেলবে। এটার বাস্তবতা নিয়ে আমি খুবই সন্দিহান।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আগেই সতর্ক করে দিয়েছে, গরমে নভেল করোনাভাইরাস ছড়ানো কমতে পারে-এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। এটা গরম বা ঠাণ্ডা যেকোনো আবহাওয়ায় ছড়াতে পারে। তাই প্রকৃতির ওপর আশা না করে নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।
দৈনিক আজাদী

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: